জীবনানন্দ দাশের কবিতায় উঠে আসা সেই ধানসিড়ি নদীর দুই পাড়ে ভবন তৈরি ও গাছ লাগানোর পর দখল পোক্ত করার জন্য এবার পল্লীবিদ্যুতের খুঁটি বসিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত এই নদী দখল করার ঘটনায় সম্প্রতি স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজাপুরের বাঘরি মৌজার জাঙ্গালিয়া নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে ধানসিড়ি। মোহনা থেকে শুরু করে বাঘরি বাঁশতলা পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার জুড়ে নদীটির পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে প্রায় ১০০ ফুট করে জায়গা দখল করে একতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত আবাসিক ভবন করেছেন অর্ধশতাধিক প্রভাবশালী বাসিন্দা। ফলে বর্তমানে নদীর প্রস্থ ৫০-৫৫ ফুটে এসে ঠেকেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুই বছর মেয়াদে এ নদীর সাড়ে ৮ কিলোমিটার পুন:খননের জন্য প্রায় ৪ কোটি ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তখন দীর্ঘ ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘের নদীটি ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান নদীর মোহনা থেকে দেড় কিলোমিটার বাদ দিয়ে জাঙ্গালিয়া নদীর মোহনা পর্যন্ত সাড়ে ৮ কিলোমিটার খনন করে। প্রকল্পের কার্যাদেশে নদীর ওপরে প্রস্থ ৮০ ফুট ও সমতল থেকে নদীর গভীরতা ১৫ ফুট এবং নদীর তলদেশে প্রস্থ ২০ ফুট করার কথা রয়েছে। মোহনায় বাঁধ দিয়ে খনন করে। কিন্তু কোনো দখলদারের স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়নি। এমনকি মোহনার বাঁধও অপসারণ করা হয়নি।
বাঁশতলা এলাকার বাসিন্দা হেমায়েত হাওলাদার বলেন, এই নদীর মোহনায় এক সময় বৃহত্তর বরিশালের মধ্যে সবচেয়ে বড় বন্দর ছিল। এখান থেকে ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম ও কলকাতার সঙ্গে সরাসরি জাহাজ চলাচল ছিল।
স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে বলেন, এসএ নকশায় ধানসিঁড়ির মোহনা এখনো ২০০ ফুট রয়েছে। অথচ বাস্তবে এ নদীর মোহনা বলতে কিছুই নেই। মোহনা আগেই দখল করেছেন ওয়ারেছ হাওলাদার নামের এক ব্যাক্তি। তিনি প্রথমে মোহনার তীরে গাছ লাগিয়ে দখল করেছেন। পরে ভুয়া কাগজ তৈরি করে অন্যের কাছে বিক্রিও করে দিয়েছেন নদীর এ জমি। এরপর যেটুকু বাকি ছিল সেটুকুও দখল করতে ছয় মাস আগে সেখানে ভবন বানিয়েছেন। সেই দখল পাঁকাপোক্ত করতে ধানসিঁড়ি নদীর মোহনার বাঁধের ওপর পল্লীবিদ্যুতের খুঁটি বসিয়েছেন, যাতে পরবর্তীতে এই বিদ্যুতের খুঁটির পরে পূর্বদিকে আর নদী খনন করতে না পারে কেউ।
বাঘরি এলাকার বাসিন্দা মোস্তফা সিকদার বলেন, শুধুমাত্র দখলের উদ্দেশ্যেই বিদ্যুতের খুঁটি মোহনার মাঝখানে বসিয়েছেন ওই প্রভাবশালী।
জানতে চাইলে দখলদার ওয়ারেস হাওলাদার দেশ বলেন, ‘ধানসিঁড়ির মোহনায় পল্লীবিদ্যুতের খুঁটি বসানোর ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।’ নদীর জায়গা অবৈধভাবে দখল করে কেন ভবন করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি নদীর জায়গা দখল করিনি, তার পরেও নদী খননের কাজে আমার এ জায়গা দরকার হলে আমি ভবন ভেঙে সরকারকে সহযোগিতা করব।
ঝালকাঠি পল্লীবিদ্যুৎ সাব-জোনাল কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী ওমর ফারুক বলেন, ‘বিষয়টি আসলে আমি জানি না। কারণ আমি এখানে যোগদান করেছি বেশিদিন হয়নি। খোঁজ নিয়ে আজই ঘটনাটি জানব। বিদ্যুতের খুঁটি যদি নদীর সীমানায় পড়ে তাহলে আমি সেটা শিগগিরই সরিয়ে নেব।
ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী রাকিব হাসান বলেন, ‘আমরা আগামী মঙ্গলবার নকশা অনুযায়ী ধানসিঁড়ি নদীর মোহনা মেপে সীমানা নির্ধারণ করব।শুধু বিদ্যুতের খুঁটি নয় নদীর সীমানায় অন্য কিছুও যদি থেকে থাকে সেগুলো অপসারণ করে নদীর খনন আবার শুরু করব।
Leave a Reply