বেশি বেশি বিসমিল্লাহ পড়া
যেকোনো কাজ শুরুর আগে বিসমিল্লাহ পড়া উচিত। বিসমিল্লাহ পড়ে কাজ শুরু করলে সেই কাজে সফলতা ও বরকত আসে। আমরা খেতে বসলে বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু করব। পড়ার সময় বিসমিল্লাহ বলে পড়া শুরু করব। অফিসে বা স্কুলে কিংবা অন্য কোথাও যাওয়ার সময় বিসমিল্লাহ বলে যাত্রা শুরু করব। এটাও একটা ইবাদত। এর ফলে যতক্ষণ খাওয়ার মধ্যে থাকব, পড়ার মধ্যে থাকব, যাত্রার মধ্যে থাকব, ততক্ষণ আল্লাহর রহমত পেতে থাকব।
রোজাদার ব্যক্তি বা পথিককে সাহায্য করা
রোজার সময় কোনো রোজাদার ব্যক্তিকে যেকোনো ধরনের সাহায্য করাও ইবাদত। ভালো ব্যবহার করা, কোনো রোজাদারকে খাওয়ানো সবই ইবাদতের শামিল। একজন অন্ধ লোক রাস্তা পার হতে পারছে না, তাকে হাত ধরে রাস্তা পার করে দিলেও তা ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। চলার পথে কোনো হতদরিদ্রকে সাহায্য করা, দান-সদকা করাও ইবাদত।
আলহামদুল্লিাহ বলা
আল্লাহর দেওয়া রিজিকের ওপর সন্তুষ্টি জ্ঞাপন করে আলহামদুল্লিাহ বলা। খাওয়া শেষে কিংবা নিজের অবস্থানের প্রতি কৃতজ্ঞ থেকে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করাও একটি ইবাদত।
সালাম আদান-প্রদান
চলাফেরায় সালাম আদান-প্রদান অনেক সওয়াবের কাজ। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা সালাম আদান-প্রদানের পদ্ধতি বর্ণনা করে বলেন, ‘যখন তোমাদের অভিবাদন করা হয় (সালাম দেওয়া হয়), তখন তোমরাও তা অপেক্ষা (উত্তরে) উত্তম অভিবাদন কর অথবা ওরই অনুরূপ কর।’ (সুরা নিসা: আয়াত ৮৬)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ তার মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে, তখন সে যেন তাকে সালাম দেয়। তবে এ সালামের মধ্যে অপর ভাইয়ের শান্তির জন্য দোয়া ও শুভাকাঙ্ক্ষার মনোভাব থাকতে হবে।’
সালামের সাধারণ নিয়ম হলো, আরোহী ব্যক্তি হাঁটা ব্যক্তিকে আর হেঁটে চলা ব্যক্তি বসা ব্যক্তিকে সালাম দেবে। হযরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আরোহী পথচারীকে, পথচারী উপবিষ্টকে ও অল্প মানুষ বেশি মানুষকে সালাম দেবে। (সহিহ বোখারি: ৬২৩২)
সৎ কাজের আদেশ করা এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকা
এটা এমন এক আমল, যা প্রত্যেক মুমিন ও মুসলমানের জন্য সবসময় জরুরি। বিশেষত রাস্তাঘাটে। কারণ, সেখানেই সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়। তাই সৎ কাজের আদেশ করা এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকাকে বিশেষভাবে রাস্তার হকের মাঝে গণ্য করা হয়েছে। এটা শুধু চলাচলের সময় নয়, সব অবস্থায়ই এটি মুমিনের দায়িত্ব; কোনো অন্যায় দেখলে সাধ্যমতো তা দূর করার চেষ্টা করা।
পথহারাকে পথ দেখিয়ে দেওয়া
পথ চলতে এমন অনেক মানুষ পাওয়া যায়, যারা পথ চেনে না। এমন পথিককে পথ দেখিয়ে দেওয়া মহৎ নেক কাজ। এর গুরুত্ব শুধু পথহারা লোকেরাই উপলদ্ধি করতে পারে। এটিকে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদকা বলে গণ্য করেছেন। তিনি বলেছেন, পথ না চেনা ব্যক্তিকে পথ দেখিয়ে দেওয়া তোমার জন্য একটি সদকা। (জামে তিরমিজি: ১৯৫৬)
এই আমলের অন্তর্ভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয় হলো অন্ধ, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের রাস্তা পারাপারে সহযোগিতা করা।
অত্যাচারিত ও বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করা
অত্যাচারিত ও বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। নানা কারণে রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে নানা স্থানে মানুষ অত্যাচারের শিকার হয়, বিপদের সম্মুখীন হয়। ফলে অন্যের সাহায্য-সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। কাউকে বিপদ থেকে উদ্ধার করলে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে মহাবিপদ থেকে উদ্ধার করবেন।
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘মুসলমানরা পরস্পর ভাই ভাই। কেউ কারো প্রতি জুলুম করো না এবং শত্রুর কাছে হস্তান্তর করো না। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করবে আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের একটি কষ্ট লাঘব করবে, আল্লাহ তার কেয়ামতের দিনের একটি কষ্ট লাঘব করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটিও গোপন রাখবেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৪৮৯৩)
ইসলাম বিপদাপন্ন জীবজন্তুর সহায়তাকেও সওয়াবের কাজ বলে বিবেচনা করে। এক হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীতেই আজর-সওয়াব রয়েছে।’ (সহিহ বোখারি: ২৪৬৬)
বোঝা বহনকারীকে সহযোগিতা করা
রাস্তায় চলাচলকারীদের মধ্যে কেউ থাকে খালি হাতে, কারো সঙ্গে থাকে ভারী বোঝা। ভারী বোঝা যদিও একা বহন করা যায়, কিন্তু ওঠানো বা নামানোর সময় কারো না কারো সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে। যে ব্যক্তি এ কাজে সাহায্য করে, তার জন্য বোঝা বহনকারীর হৃদয় থেকে দোয়া আসে, এটাই স্বাভাবিক।
মাথায় করে ভারী বোঝা বহন করা কষ্টকর। এ ক্ষেত্রে যদি এমন হয়, আমার বাহনে আমি কারো ভারী বোঝা বহন করে দিলাম। সেটা ওঠানো-নামানোর চেয়ে আরও বেশি ফজিলতের। তেমনি আমার বাহন আছে, আরেকজনের নেই। আমার বাহনে আরেকজনকে নিতে পারি। এক ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলো, আমি ও সে একই দিকে যাচ্ছি। সে ক্ষেত্রে যদি আমার বাহনে তাকে উঠিয়ে নিই, এটা হবে অনেক বড় সওয়াবের কাজ। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘কোনো ব্যক্তিকে সওয়ারিতে ওঠানো বা তার সামান বহনে সহযোগিতা করাও একটি সদকা।’ (সহিহ বোখারি: ২৯৮৯)
ভালো কথা বলা
পথে একে অন্যের সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়। কুশলাদি বিনিময় হয়। এ ক্ষেত্রে সুন্দরভাবে কথা বলা উচিত। কারণ, অনর্থক, অশালীন, অন্যায় কথার কারণে অনেক সময় পথে ফ্যাসাদ হয়। আর মুমিনের শানই হলো ভালো কথা বলা; অন্যথায় চুপ থাকা। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতে ইমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।’ (সহিহ বোখারি: ৬০১৮)
আর সবচেয়ে ভালো কথা হলো, আল্লাহর দিকে মানুষকে আহ্বান করা। ভালো কাজের প্রতি আহ্বান করা। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘কথায় কে উত্তম ওই ব্যক্তির চেয়ে, যে মানুষকে আল্লাহর প্রতি আহ্বান করে।’ (সূরা হামিম আস সাজদাহ: ৩৩)
Leave a Reply