সামি সাদিকিন চৌধুরীর কথাটা বোধ হয় অনেকের সঙ্গেই মিলে যাবে। তিনি বলছিলেন, ‘শোকেসে সাজানো কাচের প্লেট, বাটি, গ্লাসগুলো আম্মুর কাছে মহামূল্যবান বস্তু। তিনি সেগুলো যখের ধনের মতো আগলে রাখতে চান।’
তাই মেয়ে যখন শোকেস থেকে গ্লাস-বাটি নামিয়ে বাজনা বাজাতে চেষ্টা করছিল, শুরুতে মা ভীষণ খেপে গিয়েছিলেন। কিন্তু ছোটবেলায় তো মায়ের কাছেই গানের হাতেখড়ি হয়েছে। তাই এক সময় মা যখন দেখলেন, মেয়ে জলতরঙ্গে উঠে আসছে দারুণ সব সুর, মুগ্ধ হয়ে গেছেন তিনি। এখন মা নিজেই শোকেস থেকে প্লেট, বাটি, গ্লাস নামিয়ে দেন!
সামি সাদিকিন চৌধুরী পড়েন ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে (ইউএপি)। আইন বিভাগের প্রথম বর্ষে। বন্ধুরা তাঁকে রিচি নামে চেনে। গত বছর করোনায় যখন ঘরবন্দী দিন শুরু হলো, তখন গানের রেওয়াজ করেই কাটছিল রিচির অবসর। সঙ্গে ফেসবুক, ইউটিউবে ডুবে থেকে সময় কেটে যাচ্ছিল অনেকখানি। হঠাৎ একদিন একটা ভিডিও চোখে পড়ল-কাচের প্লেট, বাটি, গ্লাসে পানি নিয়ে তা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জলতরঙ্গ। ব্যাপারটা বেশ মনে ধরেছিল তাঁর। সেই থেকে শুরু হলো চর্চা।
মাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে শোকেস থেকে ‘মহা মূল্যবান’ প্লেট-গ্লাস-বাটি বের করার ঝক্কি তো ছিলই। তবে তার চেয়ে ঢের কঠিন ছিল সুর তোলা। রিচির ভাষায়, ‘প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হচ্ছিল। আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছিলাম না, কীভাবে সুর তুলব। জলতরঙ্গের ওপর কোনো ভিডিও টিউটোরিয়ালও পাচ্ছিলাম না৷ কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি৷ নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে সারা দিন গ্লাস, বাটি আর পানি নিয়েই পড়ে থাকতাম।’
অবশেষে রিচি সফল হলেন। পরিচিত গানগুলোর সুর তোলার পর উৎসাহ দিলেন মা। তিনিই ভিডিও তৈরিতে সাহায্য করলেন। আর সেই ভিডিও ফেসবুকে দেওয়ার পর তো রীতিমতো ভাইরাল! রিচি বলছিলেন, ‘গান হচ্ছে আমার অন্য রকম ভালোবাসার একটা জায়গা৷ বিভিন্ন রকম বাদ্যযন্ত্র বাজাতে খুব ভালো লাগে ৷ পড়াশোনার পাশাপাশি মিউজিকটাকে এভাবেই সব সময় চর্চায় রাখতে চাই৷ ’
কাল ঈদ। প্রতি বছর চাঁদরাতে ঘুরেফিরে আসে কাজী নজরুল ইসলামের লেখা কালজয়ী গান, ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’। আমাদের অনুরোধে জলতরঙ্গ ব্যবহার করে গানটির সুর তুলেছেন সামি সাদিকিন চৌধুরী। গানটির ভিডিও দেখতে পারেন স্বপ্ন নিয়ের ফেসবুক পেজে।
Leave a Reply