ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে ততই বাড়ছে নির্বাচনী উত্তাপ। নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ভোট চাইছেন মেয়র প্রার্থীরা। তবে সাধারণ ভোটাররা নগরীর প্রধান দুই সমস্যা যানজট ও জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান চান। এ নিয়ে জোর-হিসেব নিকেশ চলছে ভোটারদের মনে। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরে ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নগরীর প্রধান দুই সমস্যা জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসনের দাবি একাধিক ভোটারদের। ভোটারদের দাবির কথা চিন্তা করে প্রার্থীরাও দিচ্ছেনা নানা প্রতিশ্রুতি। তবে নির্বাচিত হতে পারলে নগরীর এই দুই প্রধান সমস্যাই আগে সমাধান করবেন বলে জানান প্রার্থীরা। যদিও প্রার্থীদের এই প্রতিশ্রুতির হালে পানি জমছে না। নিয়ে রয়েছে ভোটারদের নানা মত, ভিন্ন মত।
গতকাল রোববার শহরের কান্দিরপাড়, চকবাজার, রাজগঞ্জ, চকবাজার, টমছমব্রীজ এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, ভোটারদের ভোট নিয়ে তেমন উৎসাহ-আগ্রহ নেই। সাধারণ ভোটারদের মনে এখনও ভোটের উত্তাপ শুরু না হলেও পছেেন্দর প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় উত্তাপ ছড়াচ্ছেন কর্মী-সমর্থকরা। প্রার্থীদের প্রচারণায় দলীয় কর্মী-সমর্থকরা একত্রে জড়ো হয়ে নানা শ্লোগান দিতে দেখা গেছে অনেক জায়গায়। বিভিন্ন পথসভায় প্রার্থীরা বক্তব্য দিয়ে শহরবাসীর মন কেড়ে নিতেও চেষ্টা করছেন।
সিএনজি চালক আবদুল্লাহ, টমছমব্রীজের ব্যবসায়ী কফিল উদ্দিন জানান, নগরীতে অনেক সমস্যা রয়েছে, তবে যানজট ও জলাবদ্ধতা প্রধান সমস্যা। কিন্তু এগুলো নিয়ে কোন প্রার্থীর মাথা ব্যাথ্যা নেই, ভোট আসলে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করবেন বলে নানা প্রতিশ্রুতির কথা শুনি কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না, ভোটের পর আর সে কথা মনে থাকে না। এবার ভোট তাকেই দেব যিনি এ সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধান করবেন।
কান্দিপাড়ের ব্যবসায়ী মো. কামাল হোসেন। তিনি বালুতপা এলাকার বাসিন্দা। দীর্ঘদিন তিনি নগরীর কান্দিপাড়ে ব্যবসা করছেন, তিনি বলেন, শহরে দিন অবৈধ পরিবহণের সংখ্যা বাড়ছে। ব্যাটারি চালিত সিএনজি অটোরিক্সা কারণে ফুটপাতেও চলাচল করা দায়। এগুলো কেউ নিয়ন্ত্রণ করছে না। যার কারণে যত্রতত্র যানজট লেগেই থাকে। দিনের বেলায় কান্দিরপাড় থেকে বালুতপা পযর্ন্ত যেতে এ ঘন্টারও বেশি সময় লেগে যায়। এছাড়াও শহরে হাইড্রোলিক হর্নের ভোগান্তি তো আছেই। নগরীতে চলাচলে শৃঙ্খলা আনতে যানবাহণের তালিকা করে অবৈধ ও লাইসেন্স নেই এমন পরিবহণগুলো বন্ধ করা জরুরী। বৈধ পরিবহণ গুলোর মধ্যে ‘কুমিল্লা সিটি করর্পোরেশন’ লিখে চালকের গায়ে আলাদা পোশাকে পরিবহণের নম্বর দিয়ে শহরের নির্দিষ্ট একটি জায়গায় পরিবহণ স্ট্যান্ড করে সিরিয়ালে চলাচলা করার দাবি জানান এই ব্যবসায়ী।
টমছমব্রীজ এলাকার নতুন ভোটার সুমাইয়া আক্তার নামে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জানান, অল্প বৃষ্টি হলেই টমছমব্রীজসহ নগরীর আশপাশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। সুরু ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও ড্রেনে ময়লা আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার না রাখায় পানি চলাচলে বিঘ্ন ঘটে, অনেক সময় ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধযুক্ত পানি উপচে সড়কেও চলে আসে। এখনও এই পর্যন্ত এটির স্থায়ীভাবে সমাধান নিরসন করা যাচ্ছে না। যিনি নির্বাচিত মেয়র হবেন, আশা করছি তিনি এ সমাধান করবেন।
ছোটরা এলাকার রফিকুল ইসলাম ও চর্থার সাম মিয়া নামে আরও দুই সিএনজি চালক বলেন, আমাগো ভোট দিতে হয় না। সারাদিন হাড়খাটুনি পরিশ্রম করি, ভোটের দিনও এই পরিশ্রমই করতে হবে। গাড়ি না চালালে পেটে ভাত জুটে না, নির্বাচন দিয়ে আমাগো কি হবে? তারা আরও বলেন, যানজট ও জলাবদ্ধতা কুমিল্লার দীর্ঘদিনের পুরাতন সমস্যা। শহরে এত জ্যাম থাকে জ্যামের জন্য গাড়ি সামনে বাড়াতে পারি না। শহরে দিন দিন পরিবহণের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এ বিষয়ে মেয়রের কোন উদ্যোগ দেখি নাই।
যানজট ও জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়ে মহানগরী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত বলেন, কুমিল্লা আমার শহর। এই শহরকে যানজট ও জলাবদ্ধতা দূর করা হবে আমার প্রথম টার্গেট। প্রয়োজন হলে আমি মাননীয়প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব, তবুও এই ভোগান্তি থেকে কুমিল্লার মানুষকে মুক্ত করব।
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বলেন, কুমিল্লা শহরকে সাজাতে ইতোমধ্যে ১৯৩৮ কোটি বরাদ্দ এসেছে। যা আমি আগের মেয়াদকালে পায়নি। আমি যদি পুনরায় নির্বাচিত হতে পারি, আগামী তিন বছরের মধ্যে নগরীর চেহারা পাল্টে দেব। এর মধ্যে জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসন থাকবে প্রথমে।
Leave a Reply